আমরা যে বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে প্রবেশ করছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ, খরা, দাবানল এবং বন্যার তীব্রতা এবং পৌনঃপুনিকতা বাড়ছে। আগস্টে পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক বন্যায় ১০০০ জনেরও বেশি মৃত্যুসহ ৩০ মিলিয়ন মানুষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বন্যাকে “জলবায়ু বিপর্যয়” বলে বর্ণনা করেছেন। স্পষ্টতই, কয়েক দশক ধরে সরকার কর্তৃক অস্বীকার, বিলম্ব এবং বিভ্রান্তির পর মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বন্যা বিপর্যয়ের যে কোনও সরকারী স্বীকৃতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে। যাইহোক, বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তন [ জলবায়ু সংকট ] এর প্রমাণ হিসাবে চরম আবহাওয়ার ঘটনার বর্ধিত তীব্রতা এবং পৌনঃপুনিকতা স্বীকার করা এবং জলবায়ু বিপর্যয় ঘোষণা করার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় জনসেবা ও ইউটিলিটি, অবকাঠামো, আবাসন এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে কয়েক দশক ধরে সরকারের ব্যর্থতার কারণে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারাত্মক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত বা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সর্বজনীনভাবে অর্থায়নকৃত ফিজিক্যাল সুরক্ষার অনুপস্থিতি (সংরক্ষিত বন ও ম্যানগ্রোভ, ভূমি ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ, পাথরের বাঁধ, প্রাকৃতিক বাঁধ, খাল, সরকারি আবাসন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, পানীয় জলের প্রবেশাধিকার) এবং সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার অভাব – বিশেষ করে নারীদের, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য – এই বন্যা ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিয়োজন, প্রান্তিককরণ এবং অবহেলা সেইসব দেশে সাধারণ ব্যাপার যেখানে সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ও মৎস্যজীবীদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, পানির উপযোগীতা এবং পাবলিক অবকাঠামোতে সরকারি ব্যয় কমিয়েছে। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নারী এবং আদিবাসী/প্রথম নৃগোষ্ঠীর মানুষদের আরও বেশি প্রান্তিকতা রয়েছে। যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অধিকার বঞ্চিত এবং প্রান্তিক তারা চরম আবহাওয়ার ঘটনার সবচেয়ে খারাপ প্রভাব অনুভব করে। পর্যাপ্ত বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, পানি এবং স্যানিটেশন এবং পুষ্টির [যা সবই সার্বজনীন মানবাধিকার] প্রবেশাধিকারের অভাবের কারণে ইতিমধ্যেই যারা স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছে, তাদের জন্য চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির প্রভাব ধ্বংসাত্মক। অধিকারের বঞ্চনা এই জলবায়ু সংকটকে বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য জলবায়ু বিপর্যযয়ে পরিনত করেছে।

চার দশকেরও বেশি আগে বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তন এড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের কার্বন নিঃসরণ কমানোর জরুরি প্রয়োজন উপলব্ধি করা হয়েছিল। [ ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ফ্র্যাঙ্ক প্রেসের স্মারকের শিরোনামটি পরিষ্কার হতে পারেনি: “ফসিল CO2 নিঃসরণ এবং একটি বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাবনা।”] কিন্তু কার্বন নিঃসরণ কমানোর এবং জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের রাজত্ব কমানোর এই আহ্বানটি থ্যাচার এবং রিগ্যানের সরকারী ব্যয় এবং সামাজিক অবকাঠামো, পাবলিক পণ্য ও পরিষেবার উপর নয়া উদারনীতিবাদ আক্রমণের আবির্ভাবের সাথে মিলে যায় এবং – সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ – আমাদের যৌথ সামাজিক মূল্যবোধ সাথে মিলে যায়। সারা বিশ্বে অনুকরণ করা হয়েছে – বেশ কয়েকটি সামাজিক গণতান্ত্রিক এবং শ্রমিক বান্ধব সরকার সহ – গত ৪৫ বছরে নয়া উদারনীতিবাদ শুধুমাত্র আমাদের গ্রহ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সরকারের ক্ষমতাকে হ্রাস করেনি, এটি পদ্ধতিগতভাবে জনসাধারণের সামাজিক অবকাঠামোর জন্য আমাদের অধিকারগুলিকে ভেঙে দিয়েছে যা আমাদের এখন খুবই প্রয়োজন। হাসপাতাল, আবাসন, শিক্ষা, বিদ্যুৎ এবং পানির ইউটিলিটিগুলিকে এমন ভাবে বেসরকারীকরণ করা হয়েছে যা প্রায় সবকিছুকে লাভের জন্য কেনা এবং বিক্রি করা পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পানীয় জলের প্রবেশাধিকার – একটি মৌলিক মানবাধিকার।

তাপ প্রবাহ, দাবানল, বন্যা, খরা এবং অন্যান্য বৈরী আবহাওয়ার ঘটনাগুলির বর্ধিত তীব্রতা এবং পুনঃপৌনিকতা আমাদের মৌলিক মানবাধিকার এবং সামষ্টিক সামাজিক মূল্যবোধগুলি পুনরুদ্ধার করার জন্য নতুন করে আহ্বান জানিয়েছে যা সেই অধিকারগুলিকে অর্থবহ করে। বিনামূল্যে জনসাধারণের পণ্য এবং পরিষেবা, ইউটিলিটি, অবকাঠামো – সর্বজনীনভাবে অর্থায়ন করা ফিজিক্যাল এবং সামাজিক সুরক্ষা – যা গ্রামীণ এবং কৃষি সম্প্রদায়ের জরুরী প্রয়োজন। এটি বিশেষ করে নারী, শিশু, অভিবাসী এবং আদিবাসী/প্রথম নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্যও জরুরী প্রয়োজন।

এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই একই প্রান্তিক এবং অবহেলিত গ্রামীণ ও কৃষি সম্প্রদায়গুলিকে অবশ্যই বিশ্বকে খাওয়াতে হবে। সার্বজনীনভাবে অর্থায়ন করা ফিজিক্যাল ও সামাজিক সুরক্ষা এবং সরকারের সমর্থন ছাড়া, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন জনিত চরম আবহাওয়া ঘটনাগুলি ক্রমাগত খাদ্য সঙ্কট তৈরি করবে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী আরও বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে।

মৌলিকভাবে এটি জলবায়ু সংকটের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্য রক্ষা করার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচার হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। আমাদের ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারক সম্পর্কিত WHO কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের শুরুর লাইনটি স্মরণ করা উচিত: “সামাজিক ন্যায়বিচার জীবন ও মৃত্যুর বিষয়।” প্রকৃতপক্ষে, এই জলবায়ু সংকটে, জলবায়ু ন্যায়বিচার জীবন-মৃত্যুর বিষয়।

হিদায়াত গ্রিনফিল্ড, রিজিওনাল সেক্রেটারি

আইইউএফ-অধিভুক্ত সিন্ধু নারী শ্রমিক পরিষদ এসএনপিসি যাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং যাদের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে তাদের সহায়তা প্রদান করে। এটি সম্মিলিত সামাজিক মূল্যবোধ এবং সংহতি, সমবেদনা এবং দায়িত্ববোধের প্রতিফলিত করে যা আমাদের অবশ্যই পুনরুদ্ধার করতে হবে।

এই জলবায়ু সংকটে মানবাধিকারের গুরুত্বটি জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের মানবাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রস্তাবে স্বীকৃত হয়েছে [জুলাই ১৪, ২০২১]:

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে লোকজনের মুখোমুখি হওয়া বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলির উপর জোর দেওয়া, যার মধ্যে রয়েছে অসুখের প্রতি তাদের বর্ধিত সংবেদনশীলতা, তাপমাত্রা সম্পর্কিত অবসাদগ্রস্থতা, পানির ঘাটতি, গতিশীলতা হ্রাস, সামাজিক বর্জন এবং শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক সহনশীলতা হ্রাস, সেইসাথে তাদের সুনির্দিষ্ট চাহিদার সমাধান করতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং জরুরী পরিস্থিতি এবং স্থানান্তর, জরুরী  মানবিক প্রতিক্রিয়া এবং যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার জন্য দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা,

ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে জনগণের মানবাধিকার এবং তাদের জীবিকা, খাদ্য ও পুষ্টি, নিরাপদ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য-পরিচর্যা পরিষেবা এবং ওষুধ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত আবাসন এবং শোভন কাজের জন্য তাদের প্রবেশাধিকার আরও ভালভাবে নিশ্চিত করার জন্য সবুজ জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এবং পরিষেবাগুলিকে জরুরি এবং মানবিক প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত করা যায় তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রগুলির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।