২৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক শ্রমিক স্মৃতি দিবস। এটি শ্রমিকদের শোকের দিন, শ্রমিকদের জীবনের ভয়ানক ক্ষতি, উত্তর না পাওয়া হাজারো প্রশ্ন, ক্রোধ এবং হতাশা প্রকাশের দিন।  যদিও কিছু কিছু সরকার, নিয়োগকর্তা এবং ইউনিয়ন ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস হিসাবে প্রচার করতে চায়, এটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস নয়। প্রকৃত পক্ষে এটি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং সরকার এবং শিল্প-কলকারখানা এবং কোম্পানির পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি উদযাপন করার দিবস নয়। এটি সেই সকল লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের স্মরণ করার দিন যারা কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন, বা গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অসুস্থ হয়েছেন।

লক্ষ লক্ষ নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে কারো ভাই-বোন, মেয়ে ও ছেলে, স্ত্রী, স্বামী, বাবা-মা, বন্ধু রয়েছে, যারা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আসেননি, অথবা যারা কাজ করতে গিয়ে কর্মজনিত আঘাত, রোগাক্রান্ত এবং অসুস্থতায় মারা গেছেন। পরিসংখ্যান নয়, বাস্তব জীবন। জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করতে গিয়ে জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ২৮ এপ্রিল হল এমন একটি দিন যা এখনও কেন কর্মজনিত কারনে শ্রমিকরা নিহত হচ্ছে, আহত হচ্ছে এবং অসুস্থ হচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করার এবং এগুলো বন্ধ করার দাবি জানানোর দিন।

২৮ এপ্রিল একটি তাগিদ যা স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিটি শ্রমিকের তাদের প্রিয়জনদের কাছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায়, কোনরকম আহত বা অসুস্থতা ছাড়া নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা এই অজুহাত মেনে নিতে পারি না যে বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ পেশার কারনে শ্রমিক মারা যায়। যদি  পেশা বিপজ্জনক হয়, তাহলে আমাদের অবশ্যই তা নিরাপদ করতে হবে। এটিকে নিরাপদ করতে অর্থ ব্যয় করতে হবে, নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে, পুনরায় ডিজাইন  এবং বিনিয়োগ করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে জীবন বাঁচানোর চেয়ে – একে অপরকে হত্যা করার নতুন উপায়- বর্তমানে সামরিক গবেষণা এবং উন্নয়নে বেশি ব্যয় হচ্ছে। সামরিক বাজেট এবং হত্যার বাণিজ্যে ব্যয় করা অর্থের একটি ভগ্নাংশ পরিমাণ ব্যায় আমাদের কাজকে মৌলিকভাবে এমন উপায়ে রূপান্তর করতে দেয় যা কর্মজনিত বিপদ এবং ঝুঁকি দূর করে। এর অর্থ হল আরও বেশি শ্রমিক কাজ থেকে নিরাপদে এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করা। এর অর্থ হবে কম পরিবার জিজ্ঞাসা করবে কেন তাদের প্রিয়জনকে তাদের কাজের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। এর অর্থ হবে ২৮ এপ্রিল অপেক্ষাকৃত কম জীবনহানির জন্য শোক করা।

২০২৩ সালে আমরা সামরিক সংঘাত এবং যুদ্ধ বন্ধ করার, নিরস্ত্রীকরণ এবং শান্তির জন্য আহŸান জানাই, এবং আমরা সরকার এবং তাদের কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকদের হত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে আমরা সরকার ও মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাই কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হত্যা বন্ধ করতে। আমাদের জরুরীভাবে সরকারী এবং বেসরকারী অর্থনৈতিক সংস্থানগুলিকে হত্যার ব্যবসা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং জীবন রক্ষায় বিনিয়োগ করা দরকার। কর্মজনিত আঘাত, অসুস্থতা এবং রোগের কারণে কর্মক্ষেত্রে আর প্রাণ হানি ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।

নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করি এবং জীবনের জন্য লড়াই করি।

শ্রমিক হত্যা বন্ধ করো।